বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড
বিদায়ী বছরে ব্যয় বেড়েছে ৪১৫ শতাংশ
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
৩১-১২-২০২৪ ০৪:৪৭:৫৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
৩১-১২-২০২৪ ০৪:৪৭:৫৮ অপরাহ্ন
বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আয় বেড়েছে ৮১ শতাংশ। আয়ের বিপরীতে ব্যয় বেড়েছে ১৫৯ শতাংশ। আয় ও ব্যয়ের এ ঘাটতি মেটাতে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকিবাবদ ব্যয় বেড়েছে ৪১৫ শতাংশ।
সক্ষমতার তুলনায় গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। অথচ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে হয়েছে আড়াইগুণ। এ ব্যয় দ্রুত বাড়লেও সে তুলনায় কম হারে বেড়েছে বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য। ফলে পিডিবির আয়ে ও ব্যয়ে তৈরি হয়েছে অসামঞ্জস্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান ছিল এক টাকা এক পয়সা। গত অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার টাকা ১৪ পয়সা।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয়ের প্রধানতম খাতের মধ্যে রয়েছে- জ্বালানি খরচ, ক্যাপাসিটি চার্জ, পরিচলন ব্যয় ইত্যাদি। পিডিবির আয়-ব্যয়ের এ অসামঞ্জস্যতা ও সরকারের ভর্তুকির চাপ মেটাতে বিশ্লেষকরা বলছেন, সাশ্রয় জ্বালানির ব্যবহার ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে অসম চুক্তির ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ কমিয়ে আনা। এটি করতে পারলে অনেকটাই ফিরে আসবে আর্থিক স্থিতিশীলতা।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন বলেন, পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয়ের অন্যতম খাত হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ। বিগত সরকারের সময় কারসাজি করে অসংখ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র চড়া ক্যাপাসিটি চার্জের চুক্তিতে স্থাপন করা হয়েছে। যা সরকারের ভর্তুকির চাপ বাড়িয়ে তোলার অন্যতম কারণ। এখন পিডিবি ও সরকারের উচিত আদানি, এস আলমসহ যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বেশি, চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তা কমিয়ে আনা। ফলে পিডিবির উৎপাদন ব্যয় অনেকটা কমে আসবে এবং সরকারের আর্থিক চাপও কমবে।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুন শেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ হাজার ২৬২ মেগাওয়াট। ওই সময় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল (আমদানিসহ) নয় হাজার ৩৪০ কোটি ২২ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবির ব্যয় হয় এক লাখ দুই হাজার ৯২৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর সঙ্গে পরিচালন ও অন্যান্য ব্যয় যোগ করে ওই অর্থবছরে পিডিবির মোট ব্যয় দাঁড়ায় এক লাখ ১১ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ বিক্রিসহ অন্যান্য খাত মিলিয়ে পিডিবির আয় ছিল মাত্র ৬৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
এ হিসাবে গত অর্থবছর পিডিবির আয় বেড়েছে ১২ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তবে, ব্যয় বেড়েছে আট হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা বা আট দশমিক ১০ শতাংশ। প্রথমবারের মতো ব্যয়ের তুলনায় আয় বেশি বেড়ে যাওয়ায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর সরকার ভর্তুকিও দেয় সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। এটিও বিদ্যুৎ খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভর্তুকি। গত অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয় সামান্য কমে দাঁড়ায় ১১ টাকা ০২ পয়সা। সেই বিদ্যুৎ বিক্রির পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার বেড়ে দাঁড়ায় ছয় টাকা ৮৮ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান কমে দাঁড়ায় ছয় টাকা ১৪ পয়সা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যা সর্বোচ্চ রেকর্ড। সরকার ওই বছর ভর্তুকি দেয় সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১১ টাকা ৪ পয়সা, যা পিডিবির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে, সেই বিদ্যুৎ বিক্রির পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার ছিল পাঁচ টাকা ৯৮ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান ছিল পাঁচ টাকা ৬ পয়সা। এটিও পিডিবির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট। ওই সময় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল (আমদানিসহ) আট হাজার ৭০৩ কোটি ৯৬ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবির মোট ব্যয় হয় ৯৬ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। এর সঙ্গে পরিচালন ও অন্যান্য ব্যয় যোগ করে ওই অর্থবছরে পিডিবির মোট ব্যয় দাঁড়ায় এক লাখ তিন হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ বিক্রিসহ অন্যান্য খাত মিলিয়ে পিডিবির আয় ছিল মাত্র ৫১ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা।
এ হিসাবে ওই অর্থবছরে পিডিবির আয় বেড়েছে সাত হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তবে, ব্যয় বেড়েছে ২৫ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা বা ৩৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ সময় পিডিবির লোকসান আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যা সর্বোচ্চ রেকর্ড। সরকার ওই বছর ভর্তুকি দেয় সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১১ টাকা ৪ পয়সা, যা পিডিবির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে, সেই বিদ্যুৎ বিক্রির পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার ছিল পাঁচ টাকা ৯৮ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান ছিল পাঁচ টাকা ৬ পয়সা। এটিও পিডিবির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স